SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - জীববিজ্ঞান (পুরানো সংস্করণ) - কোষ বিভাজন | NCTB BOOK

জীবদেহে মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোষ বিভাজনের কারণে প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজমের মধ্যকার আয়তন ও পরিমাণগত ভারসাম্য রক্ষিত হয়। এর ফলে বহুকোষী জীবের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে। সব বহুকোষী জীবই জাইগোট নামক একটি কোষ থেকে জীবন শুরু করে। এই একটি কোষই বারবার মাইটোসিস বিভাজনের ফলে অসংখ্য কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে পূর্ণ জীবে পরিণত হয়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি, চারটি থেকে আটটি, এভাবে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে একটি কোষ থেকে সম্পূর্ণ একটি জীব (যেমন: মানুষ, প্রায় 30 ট্রিলিওন কোষ) গঠিত হতে বুঝি অনেক লম্বা সময় প্রয়োজন। কিন্তু সেটি সত্যি নয়। যদি বৃদ্ধির জন্য দরকারি পুষ্টির সরবরাহ অক্ষুণ্ণ থাকে, সবগুলো কোষই বিভাজনক্ষম হয় এবং প্রতিবার বিভাজনে যদি একদিন করে সময় লাগে বলে ধরে নিই, তবু মাত্র 40-50 দিনের মাথায় মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কোষ তৈরি হয়ে যাবে। মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় তৈরি অপত্য কোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা ও গুণাগুণ একই রকম থাকায় জীবের দেহের বৃদ্ধি সুশৃঙ্খলভাবে হতে পারে। মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করে, মাইটোসিসের ফলে অঙ্গজ প্রজনন সাধিত হয় এবং জননকোষের সংখ্যাবৃদ্ধিতে মাইটোসিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্ষতস্থানে নতুন কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে জীবদেহের ক্ষতস্থান পূরণ করতে মাইটোসিস অপরিহার্য। কিছু কিছু জীবকোষ আছে যাদের আয়ুষ্কাল নির্দিষ্ট। এসব কোষ বিনষ্ট হলে মাইটোসিসের মাধ্যমে এদের পূরণ ঘটে। মাইটোসিসের ফলে একই ধরনের কোষের উৎপত্তি হওয়ায় জীবজগতের গুণগত বৈশিষ্ট্যের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। তবে অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস টিউমার এমনকি ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ হতে পারে।

টিউমার, ক্যান্সার এ শব্দগুলোর সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এগুলো অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের ফল। মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি এভাবে কোষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু কোষ বিভাজন প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিত থাকে। কোনো কারণে এই নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে গেলে অস্বাভাবিকভাবে কোষ বিভাজন চলতে থাকে। এর ফলে টিউমার সৃষ্টি হয় এবং প্রাণঘাতী টিউমারকে ক্যান্সার বলে।

ক্যান্সার কোষ এই নিয়ন্ত্রণহীন অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনেরই ফল। গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণু, রাসায়নিক পদার্থ কিংবা তেজস্ক্রিয়তা ক্যান্সার কোষ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। সহস্রাধিক জিনকে ক্যান্সার কোষ তৈরিতে সহায়ক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। উদাহরণ দেওয়ার জন্যে বলা যায়, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের E6 এবং E7 নামের দুটি জিন এমন কিছু প্রোটিন সৃষ্টি করে, যা কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রক প্রোটিন অণুসমূহকে স্থানচ্যুত করে। এর ফলে কোষ বিভাজনের নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে যায় এবং সৃষ্টি হয় জরায়ুমুখের টিউমার। অনেক সময় এ দুটি জিন পোষক কোষের জিনের সাথে একীভূত হয়ে যায় এবং কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী প্রোটিন অণুগুলোর কাজ বন্ধ করে দেয়। সৃষ্টি হয় ক্যান্সার কোষ, কিংবা ক্যান্সার। অনেক ধরনের ক্যান্সার রয়েছে এবং সেগুলো সবই কমবেশি মারাত্মক রোগ। লিভার, ফুসফুস, মস্তিক্ষ, স্তন, ত্বক, কোলন এবং জরায়ু, অর্থাৎ দেহের প্রার সকল অঙ্গেই ক্যান্সার হতে পারে।

দলগত কাজ
কাজ: শিক্ষক কয়েকজন করে শিক্ষার্থী নিয়ে দল গঠন করবেন এবং এক এক দলকে মাইটোসিস কোষ বিভাজনের এক একটি পর্যায়ের চিত্র অঙ্কন করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করতে বলবেন।

 

Content added || updated By